Disqus Shortname

Wednesday, April 27, 2016

বৃহত্তর সিলেট মনোমুগ্ধকর স্থান

হযরত শাহজালালের পূণ্যভূমি আর দুটিপাতা একটি কুড়ির দেশ সিলেটের নান্দনিক সৌন্দর্যে সারাবিশ্ব বিমুগ্ধ। সিলেট শহরের মধ্যখানে অবস্থিত হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার এবং সিলেট শহরের উপকন্ঠে হযরত শাহপরাণ (র.) এর মাজার অবস্থিত। এছাড়া বিভিন্ন চা বাগান, জাফলং, মাধবকুন্ডসহ সিলেটের বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন সিলেটে ভিড় করেন দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে বৃহত্তর সিলেটের দর্শনীয় ও পবিত্র স্থানগুলো নানা স্থানের মানুষের সমাগমে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। বর্তমান সিলেটের যেসব স্থান পর্যটকদের আকর্ষণ করে সেগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হলো;

হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার
দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নিকট হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার দর্শন ও জিয়ারত সিলেট ভ্রমণের প্রধান অংশ হিসেবে বিবেচিত।

সিলেটের কোট পয়েন্ট থেকে আম্বরখানা যাবার পথে চৌহার্ট পয়েন্ট পেরিয়ে কয়েকশ গজ দূর এগিয়ে গেলেই বাঁ পাশেই দেখা যাবে হযরত শাহজালাল (রঃ)-এর দরগাহের প্রবেশ পথ। আধুনিক ডিজাইনে কলেমা লেখা খচিত এই গেট দিয়ে প্রবেশ করে পশ্চিম দিকে একটুখানি এগিয়ে গেলে আরো একটি লক্ষ্য করা যাবে। সেই গেট পেরিয়ে প্রবেশ করলেই মসজিদের পাশ দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে হাতের ডান পাশেই গিলাপ মোড়ানো বিখ্যাত পীর হযরত শাহজালাল (র.)-এর পবিত্র মাজার।

১২৭১ খ্রিস্টাব্দে ইয়েমেনে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান পীর। তাঁর পিতা মোহাম্মদ বিন ইব্রাহিম কোরেশী এবং মাতা সৈয়দা হাসিনা ফাতিমা বিনতে জালালুদ্দিন সুরুখ বোখারী উভয়েই ছিলেন কুরাইশ বংশীয়। কিন্তু হযরত শাহজালাল (র.) ছোট বেলাতেই পিতা-মাতা হারালে তিনি তার মামা মস্তবড় আলেম সৈয়দ আহমদ কবীরের কাছেই দ্বীনি তালিম হাসিল করেন এবং ইলমে মারেফাতের ছবক নেন। অল্পকালের মধ্যেই তিনি কামালিয়াত হাসিল করেন এবং কামেল ওলি হয়ে যান। ৩০ বছর বয়সে তিনি স্বপ্নযোগে হিন্দুস্থানে ইসলাম প্রচারে আদিষ্ট হন। বিষয়টি মামাকে জানালে তিনি অনুমতি দেন। সেই সাথে তাঁকে একমুঠো মাটি দিয়ে বলেন যে, স্বাদে বর্ণে ও গন্ধে এই মাটির তুল্য মাটি যেখানে পাবে সেখানে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করবে। পরবর্তীতে হযরত শাহজালাল (র.) দলবল নিয়ে বিভিন্ন শহর বন্দর ও দেশ পেরিয়ে এই অঞ্চলে এসে পৌঁছেন। অতঃপর তখনকার অত্যাচারী রাজা গৌড় গোবিন্দকে বিনা রক্তপাতে পরাজিত করেন। পরবর্তীতে এই অঞ্চলের মাটির সাথে তাঁর আনা মাটি মিলে গেলে এখানেই হযরত শাহজালাল (র.) তাঁর দলবল নিয়ে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে আস্তানা গড়ে তুলেন। তাই হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার সারা বিশ্বের মুসলমানদের নিকট একটি পবিত্র স্থান। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সিলেটে আসলে হযরত শাহজালালের মাজার দর্শন করে তৃপ্তি ও আনন্দ লাভ করেন। অবশ্য অন্য ধর্মাবলম্বীরাও এই পবিত্র মাজার দর্শনে আসেন।

শ্রী চৈতন্যের বাড়ি
সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানার প্রসিদ্ধ স্থান ঢাকা দক্ষিণ। এই ঢাকা দক্ষিণ বাজারের সনি্নকটে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে শ্রীমান মহা প্রভুর পুণ্যধাম, কলি যুগের অবতার, শ্রী চৈতন্য মহা প্রভুর বাড়ি। কথিত আছে তিনি নবদ্বীপে জন্মলাভ করেছিলেন এবং সন্যাস গ্রহণের পর এই পিতৃধামে এসেছিলেন। ঢাকা দক্ষিণের প্রাচীন প্রস্তর কারুকার্যময় পাহাড়িয়া টিলাভূমির উপর নির্মিত মন্দির ও বিগ্রহ এবং সর্বোপরি তাঁর দাদি বাড়ির প্রাকৃতিক পরিবেশ অতিশয় নান্দনিক বলে দর্শনার্থীদের মন ভরিয়ে দেয়। এই স্থানে প্রতি বছর আষাঢ় ও চৈত্র মাসে মেলা বসে। এই মেলায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যময় হস্তশিল্প সামগ্রী ও বিভিন্ন ফলের সমাহার হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ তৈরি হয় এবং বহুলোকের সমাগম হয়। সারা বছর বিভিন্ন সময় দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ হিন্দু সম্প্রদায় এই পীঠস্থান দর্শন করতে আসেন।

জাফলং
সিলেটের দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে জনপ্রিয় স্থানটির নাম হচ্ছে জাফলং। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে জৈন্তা থানার অর্ন্তগত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে এই দর্শনীয় স্থানটি অবস্থিত। পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জলধারা, ছোটবড় সাদা কালোসহ নানা বর্ণের পাথর, অতিদূরে মেঘালয় রাজ্যের সবুজ প্রকৃতিঘেরা পাহাড়রাজ্য অবলোকন করে চোখ জুড়িয়ে যায়। জাফলংয়ে রয়েছে আদিবাসী খাসিয়াপুজ্ঞী। যেখানে খাসিয়া উপজাতিরা বাস করে। তাদের জীবনযাত্রাও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তাদের উৎপাদিত পান, সমগ্র সিলেটবাসীর নিকট খুবই প্রিয়। জাফলংয়ের আশপাশে রয়েছে কয়েকটি চা বাগান। চা গাছের সবুজ সমারোহ সহজেই পর্যটকদের হৃদয় আকর্ষণ করে। অর্থনৈতিক দিক থেকেও জাফলং একটি সমৃদ্ধশালী স্থান। জাফলংয়ের পাথর ও বালু খুবই মূল্যবান। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পাথর ও বালু দেশের বিভিন্ন জেলায়-উপজেলায় ট্রাক ও নৌকার মাধ্যমে এখান থেকে চলে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এদেশের জন্য জাফলং একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে পরিগণিত।

সারিনদী
সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার আরেকটি উল্লেখযোগ্য নৈসর্গিক স্থান হচ্ছে জৈন্তা থানার অন্তর্গত সারিনদী। এই নদীটিকে আবার স্থানীয় জনগণ লালাখাল বলেও সম্বোধন করে থাকেন। সিলেট থেকে জাফলং যাবার পথে দরবস্ত বাজার পেরুলে সারিনদীর দর্শন লাভ করা যায়। সারিঘাট নামক স্থানে নেমে নৌকা অথবা স্পিডবোর্ড চড়ে এই নদীর নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি মৌসুম বা সময় এই নদীর জল অদ্ভুদ রকম স্বচ্ছ থাকে। এই নদীর স্বচ্ছ জলধারা ভেদ করে নদীর তলদেশের ক্ষুদ্র বালুকণা দেখা যায়। সেই সাথে ছোট ছোট নানা মাছের জীবন্ত ছোটাছুটি মন ভরিয়ে দেয়। মেঘালয় রাজ্যের উঁচু পাহাড় থেকে সৃষ্ট এই নদীটি জৈন্তা সীমান্ত দিয়ে বাঘছড়া ও লালাখাল চা বাগানের পাশ দিয়ে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করেছে। এক সময় এই নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। এই নদীর কালো বাউস এই অঞ্চলের মানুষের নিকট ইলিশ মাছের স্বাদ দিত। কিন্তু ভারতের উজানে ছোট-বড় নানা রকম বাঁধ ও নদীর পার্শ্ববর্তী স্থানে কলকারখানা স্থাপন করায় সারিনদীটির সম্পদ ও সৌন্দর্য হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। তারপরেও এই নদীর স্বচ্ছ জলরাশি, স্বল্পদূরে মেঘালয় রাজ্যের ছোট বড় সবুজ পাহাড় পর্যটকদের চোখ জুড়িয়ে দেয়। এছাড়া সারিনদীর ধারে গড়ে ওঠা চা-বাগান পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ করে। সারিনদীর অর্থনৈতিক গুরুত্বও রয়েছে অনেকখানি। এই নদীর উত্তোলিত বালু ও পাথর অত্যন্ত মূল্যবান। তা ছাড়া এই নদীর পাশ্র্বে বিভিন্ন জায়গায় আধিবাসী খাসিয়াদের নিবাস রয়েছে। এ কথায় সারিনদীর নান্দনিক সৌন্দর্য আমাদের মন ভরিয়ে দেয়।

টাঙ্গুয়ার হাওর
বিল ঝিল নদী নালা হাওড় বাঁওড় ইত্যাদি সৌন্দর্যের লীলাভূমি বৃহত্তর সিলেটের সুনামগজ্ঞ জেলায় রয়েছে পর্যটকদের আকর্ষণ করার প্রিয় স্থান টাঙ্গুয়ার হাওড়। হাওড় বিলাসী পর্যটকদের কাছে টাঙ্গুয়ার হাওর নানা কারণে প্রিয়। দুচোখ ভরে নানা সৌন্দর্য দেখার মতো ঐশ্বর্য টাঙ্গুয়ার হাওরে রয়েছে। শীতের মৌসুমে লাখ লাখ অতিথি পাখিদের কলতানে এই হাওড় অন্যরকম নান্দনিক সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। টাঙ্গুয়ার হাওরের মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য ছোট বড় খাল নদী নালা ছড়া। বর্ষাকালে এই হাওর বিশাল রূপ ধারণ করে। জলের বিশালতা আর হাজার হাজার ঢেউয়ের অপরূপ দৃশ্যাবলি পর্যটকদের মুগ্ধ করে, মোহাচ্ছন্ন করে রাখে। টাঙ্গুয়ার হাওড়ের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য গ্রাম। এই হাওড়ের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই হাওড় থেকে প্রতি বছর মূল্যবান মাছ ধৃত হয় এবং রফতানি হয়। প্রায় ২শ প্রজাতির মাছ এই হাওড়ে পাওয়া যায়। মাছের মধ্যে চিতল, আলুনি, মহাশোল, আইড়, দেশি পাঙ্গাস, মাগুর, শিং, রিঠা, বাছা, গুতুম প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আবার এই হাওড়ে মূল্যবান নানা প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে পানি ফল, নল খাগড়া, বন তুলসী, শাপলা, সিঙরা, হিজল, দুর্বা, পুটকীবন, চাইলা, কেশুর, আগরা অন্যতম। বর্ষাকালে এই হাওড়ের আয়তন বিশ হাজার একরের উপরে হয়। হাওড়টির গভীরতাও অনেক। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হাওড়কে পর্যটন শিল্পের আওতায় আনার জন্যে ঘোষণা দিয়েছেন।

হাকালুকি হাওর
ভ্রমণ পিপাসুদের নিকট এই হাওরটি খুবই জনপ্রিয় বা সুপরিচিত একটি জায়গা। সারাবিশ্বজুড়ে এই হাওরটির পরিচিতি রয়েছে। কয়েকটি উপজেলা নিয়ে এই হাওরটির বিস্মৃতি। সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব এবং মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব ও বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণে এই বিশাল (৮-এর পৃষ্ঠায় দেখুন) হাওরটির অবস্থান। একটি পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে এই হাওড়ের ৪০ শতাংশ বড়লেখায়, ৩০ শতাংশ কুলাউড়ায়, ১৫ শতাংশ ফেঞ্চুগঞ্জে, ১০ শতাংশ গোলাপগঞ্জে এবং ৫ শতাংশ বিয়ানীবাজার থানার মধ্যে অবস্থিত। শীতকালে লাখ লাখ অতিথি পাখিদের আগমনে এই হাওড়টির নৈসর্গিক সৌন্দর্য অনেকগুণ বেড়ে যায়। এ সময় হাওড় আর পাখি দেখার জন্যে দেশ বিদেশের পর্যটকরা এখানে এসে ভিড় করেন। তবে শীতের যে সি্নগ্ধ পরিবেশ এই হাওড়ে বিরাজ করে তা বর্ষা মৌসুমে লক্ষ্য করা যায় না। তখন হাওড়জুড়ে থই থই জল আর জলের বাতাস কাঁপানো ঢেউ অন্য রকম সৌন্দর্য নিয়ে উপস্থিত হয়। এ সময় চাঁদনী রাতের জ্যোৎস্না আলোয় নৌকা ভ্রমণ দারুণ আনন্দ দেয়। এই হাওড়ে নানা প্রজাতির মাছ ও নানা প্রজাতির ছোট বড় লতাপাতার বৃক্ষরাজি রয়েছে।

মাধবকুন্ড জল প্রপাত
বৃহত্তর সিলেটের মৌলভী বাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় রয়েছে মাধবকুন্ড নামের এই জল প্রপাতটি। এটি বাংলাদেশের সুপরিচিত একটি জল প্রপাত। যারা সিলেট ভ্রমণ করার বাসনা নিয়ে আসেন তাদের নিকট বিশেষ করে জাফলং এবং মাধবকুন্ড জলপ্রপাতটি তালিকায় রাখেন। প্রায় ২৭০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে এই জল প্রপাতটি নেমে এসেছে। শীতকালে এর পানি প্রবাহ থাকে সীমিত। তবে বর্ষা মৌসুমে জলের ধারাটি থাকে নিয়মিত। যখন উপর থেকে জলের ধারা নিচে নেমে আসে তখন দেখতে অপুর্ব লাগে। মাধবকুন্ডের আশপাশে খাসিয়া আদিবাসীদের পল্লী রয়েছে। মাধবকুন্ডকে দেশের পর্যটন শিল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। মাধবকুন্ডের পাশে হোটেল ও মোটেল রয়েছে। মাধবকুন্ড সিলেট তথা দেশের একটি প্রাচীন প্রাকৃতিক ঐতিহ্য।

আলী আমজাদের ঘড়িঘর
সিলেট জেলা সাক্রিট হাউস ও ক্বীন ব্রিজের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সিলেটের ঐতিহ্য বহু পুরনো কালের আলী আমজাদেও ঘড়িঘর। কথিত আছে পৃথি্বম পাশার বিখ্যাত জমিদার আলী আমজাদ দিল্লীর চাঁদনীচকে শাহজাদী জাহানারার স্থাপিত ঘড়ি দেখে তিনি মুগ্ধ হন। সেই মুগ্ধতা থেকেই এই জমিদারের মনে অনুরূপ একটি ঘড়ি সিলেট শহরে গড়ে তুলার ইচ্ছা তার মনে জাগ্রত হয় এবং সেই ইচ্ছা থেকেই জমিদার আলী আমজাদ সিলেটের ক্বীন ব্রিজের পাশে সুরমা নদীর তীরবর্তী স্থানে চাঁদনী ঘাটের পাশে এই ঘড়িঘর নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে তাঁর এই ঘড়িঘর আলী আমজাদের ঘড়িঘর হিসেবে সবার নিকট পরিচিতি লাভ করে। এই শৈল্পিক ও ঐতিহ্যবাহী ঘড়িঘরটি দর্শনলাভের জন্যও প্রতিদিন অনেকে আসেন এবং আলী আমজাদের ঘড়িঘর দেখে তৃপ্তি লাভ করেন।


রাতারগুল
সিলেট থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর-পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রাতারগুল একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পর্যটকদের নিকট পরিচিত হয়ে উঠেছে। বছর দুয়েক আগে এই স্থানটি নিয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা লেখালেখি করলে স্থানটি সবার নজরে আসে। মূলত এটি একটি ছোট বিল। বর্ষা ঋতুর অবিরাম বৃষ্টি জল আর ভারত সীমান্তের পাহাড়ি ঢল এই বিলটিকে জলে পরিপূর্ণ করে দিলে এই বিলটি অনেকটা সুন্দরবনের রূপ নেয়। জল আর নানা প্রকার গাছ-গাছালি এই বিলটিকে দিয়েছে এমন এক সি্নগ্ধরূপ যা পর্যটকদের চক্ষু ও মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়। রাতারগুল বিলটির স্থানীয় নাম খইয়ার বিল। বর্তমানে বিলটি পর্যটকদের নিকট মিনি সুন্দরবন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

হযরত শাহ পরাণ (র.)
মাজারভক্ত মানুষের কাছে হযরত শাহ পরাণ (র.) একটি প্রিয় নাম। যারা পূণ্যভূমি হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারত করতে আসেন তারা এই মহান দরবেশের মাজারও দর্শন লাভ করতে ছুটে যান সিলেটের অদূরে খাদিম নগর স্থানে এবং এই মহান দরবেশের মাজার জিয়ারত করে তারা মানসিক তৃপ্তি লাভ করেন। হযরত শাহ পরাণ (র.) এর মাতা ছিলেন হযরত শাহ জালাল (র.) এর সহোদরা বোন। তাঁর আদিপুরুষগণ বোখারার অধিবাসী ছিলেন। হযরত শাহ পরাণ (র.) এর পিতাও একজন উঁচুমাপের বোযর্গ ছিলেন। হযরত শাহজালাল (র.) যখন হিন্দুস্থানে আসার জন্যে যাত্রা শুরু করেন তখন তিনিও তাঁর মামার সফর সঙ্গী হন।

উল্লেখিত এসব দর্শনীয় স্থান ছাড়াও বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন্ জেলা উপজেলায় আরো অসংখ্য দর্শনীয় ও পবিত্র স্থান যেমন; মাধবপুর লেক, পাথারিয়া পাহাড়, জৈন্তাপুর রাজবাড়ি, লাউয়া ছড়া ফরেস্ট, পান থুমাই প্রভৃতি রয়েছ্। অবশ্য নতুন নতুন দর্শনীয় প্রাকৃতিক স্থান আরো নানা জায়গায় রয়েছে এগুলো যদি ঠিক মতো সাধারণ পর্যটক বা ভ্রমণ পিপাসু মানুষের নিকট উপস্থাপন করা যায় তবে সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যে ঐতিহ্য রয়েছে তা আরো প্রসারিত হবে বলে মনে করি। হাওরটির অবস্থান। একটি পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে এই হাওড়ের ৪০ শতাংশ বড়লেখায়, ৩০ শতাংশ কুলাউড়ায়, ১৫ শতাংশ ফেঞ্চুগঞ্জে, ১০ শতাংশ গোলাপগঞ্জে এবং ৫ শতাংশ বিয়ানীবাজার থানার মধ্যে অবস্থিত। শীতকালে লাখ লাখ অতিথি পাখিদের আগমনে এই হাওড়টির নৈসর্গিক সৌন্দর্য অনেকগুণ বেড়ে যায়। এ সময় হাওড় আর পাখি দেখার জন্যে দেশ বিদেশের পর্যটকরা এখানে এসে ভিড় করেন। তবে শীতের যে সি্নগ্ধ পরিবেশ এই হাওড়ে বিরাজ করে তা বর্ষা মৌসুমে লক্ষ্য করা যায় না। তখন হাওড়জুড়ে থই থই জল আর জলের বাতাস কাঁপানো ঢেউ অন্য রকম সৌন্দর্য নিয়ে উপস্থিত হয়। এ সময় চাঁদনী রাতের জ্যোৎস্না আলোয় নৌকা ভ্রমণ দারুণ আনন্দ দেয়। এই হাওড়ে নানা প্রজাতির মাছ ও নানা প্রজাতির ছোট বড় লতাপাতার বৃক্ষরাজি রয়েছে।
Share:

পুরাতন সংবাদ

Definition List

Unordered List

Support